পরীক্ষার সময় কি খাওয়া উচিত ? ( What should be eaten during the exam in Bengali ?)
পরীক্ষার সময় কি খাওয়া উচিত ? এটা একটা অনেক বড় প্রশ্ন থাকে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের কাছে। তারা সব সময় খুব চিন্তায় থাকে তাদের ছেলে মেয়েদের পরীক্ষার সিজিনে কি খাওয়ালে তাদের শরীর ভাল থাকেবে এবং সেই সঙ্গে পড়াশুনা ও ভাল ভাবে করতে পারবে।
সাধারনভাবে পরীক্ষার সময় ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার চাপ একটু বেশি বেড়ে যায়। যারা কিছুটা উপর ক্লাসে পরে তাদের অনেক সময় ধরে পড়তে হয় । তাই তারা নিজেরা নিজেদের শরীরের দিকে বেশী করে নজর দিতে পারে না। এবং অনেক সময় দেখা গেছে যে পড়াশুনার চাপে খাওয়া দাওয়া ও ঠিক ভাবে করতে পারে না অনেকেই । তার সঙ্গে পরীক্ষার একটা ভয় ও অনেকের কাছে বেশী করে দেখা দেয় এবং এই সব কারনে খাওয়ার ব্যাপারে তারা বেশ উদাসীন হয়ে পড়ে এবং ঠিক করতে পারে না যে কোন জিনসটা কোন সময় কতটা পরিমাণে খাওয়া দরকার ।
পরীক্ষার মরসুম ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে শিক্ষার্থীরা প্রায়শই ভীষণ রকম চাপ, উদ্বেগ ও মানসিক উদবেগের সাথে লড়াই করতে থাকে। এবং এই অতিরিক্ত চাপের মাঝে, পুষ্টি যে একটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ জিনিস তা তারা প্রায়শই উপেক্ষা করে ফেলে। আবার এর সঙ্গে আছে পরীক্ষার পারফরম্যান্স, ফোকাস এই সমস্ত ব্যাপারগুলো এই সমস্ত কারনে খাওয়া দাওয়া উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হয়।
তবে বন্ধুরা চিন্তা করার খুব একটা দরকার নেই আজকের এই পোস্টে , আমরা পরীক্ষার আগে একটি সুষম খাদ্য খাওয়ার ব্যাপারে সমস্ত তথ্য আপনাদের কে দেব। যাতে আপনাদের এই ব্যাপারে কোন সমস্যায় না পড়তে হয় । এবং আমার এই নিবন্ধে অতি প্রয়োজনীয় খাবারগুলি ব্যাপারে বলব, যা আপনার মস্তিষ্ককে সর্বোত্তমভাবে কাজ করতে সাহায্য করতে পারে।
” পরীক্ষার সময় কি খাওয়া উচিত” কেন দরকার বিশেষ পুষ্টি –
“পরীক্ষার সময় কি খাওয়া উচিত” এই ব্যাপারে আলোচনা করতে হলে প্রথমেই যেটা বলা দরকার কেন পরীক্ষার মরসুমে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাওয়ার দাওয়ার -এর দিকে বেশী নজর দিতে হবে। এর কারণ হিসাবে আপনি বলতে পারেন যে এটি সরাসরি তাদের পড়াশুনার ক্ষেত্রে মনোনিবেশ করার, এবং স্পষ্টভাবে চিন্তা করার এবং সব দিক থেকে পরীক্ষার খাতাতে নিজেকে সুন্দর ভাবে প্রকাশিত করার ক্ষেত্রে খুব কার্যকরী ।
পরীক্ষার সময় পড়াশুনার ভীষণ চাহিদা , অনেক বেশী অধ্যয়ন সময়, ভীষণ মানসিক চাপের তৈরি হয় । তাই এই সমস্ত ব্যাপার কে প্রতিরোধ করার জন্য খাদ্যের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার দরকার পড়ে।
এদের মধ্যে নিম্নলিখিত কারণ আপনি যদি একটু ভাল করে পড়েন তবে অবশ্যই বুঝতে পারবেন কেন আমরা আজ “পরীক্ষার সময় কি খাওয়া উচিত” বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি।
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং শক্তি কে বাড়ানোর জন্য পরীক্ষার সময় কি খাওয়া উচিত জানা দরকার:
যদি আপনি আপনার মস্তিষ্কের সর্বোত্তম কার্য কে উপস্থাপনা করতে চান , এটির জন্য সঠিক পুষ্টির সরবরাহ-এর প্রয়োজন। মস্তিষ্ক একটি শক্তি-নিবিড় অঙ্গ। কার্বোহাইড্রেট গ্লুকোজ উৎপন্ন করে, যা মস্তিষ্কের প্রধান শক্তির উৎস। যেমন দানা শস্য এবং কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাওয়ার দরকার পড়ে , যা ধীরে ধীরে গ্লুকোজ নিঃসরণ করে, এই সমস্ত খাদ্য মাত্রা একটি অবিচ্ছিন্ন এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ শক্তির উত্স কে জোগান দিতে থাকে।
পরীক্ষার সময় কি খাওয়া উচিত জানা দরকার
এবার আমরা জেনে নি কোন কোন রকমের খাদ্য নির্বাচন করা উচিৎ ।যা থেকে আমরা প্রয়োজনীয় শক্তি পেয়ে যাব ।
দরকারি খাদ্য নির্বাচন:
গোটা শস্য: গোটা শস্য, যেমন বাদামী চাল এবং গমের রুটি খাওয়া ভীষণ দরকার , এই সমস্ত খাদ্য আপনার সিস্টেমে গ্লুকোজের ধারাবাহিক প্রবাহের নিশ্চয়তা দিতে পারে। এই সমস্ত খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেটগুলি থাকে যা থেকে এই জটিল কার্বোহাইড্রেটগুলি শক্তির একটি নির্ভরযোগ্য উত্স আমাদের শরীর কে শক্তি যোগাতে থাকে।
চর্বিযুক্ত মাছ: ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিডে যুক্ত মাছ খাওয়া ভীষণ দরকার, এই সমস্ত খাদ্য মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যক। ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের কোষগুলির মধ্যে কার্যকর যোগাযোগের সুবিধা দেয় এবং মস্তিষ্কের কোষের ঝিল্লির কাঠামোগত অখণ্ডতাকে আরও উজ্জীবিত করে । পরীক্ষার সময় মাছ খাওয়া স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে এবং জ্ঞানীয় কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষ করে আমাদের দেশীয় মাছ বা সামদ্রিক মাছ দুই ধরনের মাছ সমান ভাবে কার্যকরী।
ব্লুবেরি: ব্লুবেরি খুব ভাল একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাওয়ার বলে বিবেচিত হয়। এই ধরনের ফল বা খাবার কে আপনি একটি ভাল পাওয়ার হাউস হিসাবে ও বিচেচনা করতে পারেন। এই ফল মস্তিষ্কের বার্ধক্য হ্রাস করতে পারে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পারে। এই ফলগুলি বুদ্ধির কার্যকারিতা অনেকটা উন্নত করাতে পারে। দেখা গেছে এই ফলে এমন রাসায়নিকও রয়েছে যা মস্তিষ্কের কোষের যোগাযোগ বাড়াতে ভীষণ রকম পারদর্শী।
বাদাম জাতীয় খাবার : ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং ভিটামিন ই বাদাম, আখরোট, ফ্ল্যাক্সসিড এবং চিয়া বীজে পাওয়া যায়। এই সমস্ত খাবার পুষ্টির জন্য ভীষণ দরকারি। কারন এই সমস্ত খাবার আপনাকে অবসাদ দেবে না বরং আপনাকে চঞ্চলতা এনে দিতে সাহায্য করবে। এই উপাদানগুলি মস্তিষ্কের সাধারণ স্বাস্থ্য এবং কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। দীর্ঘ সময় পড়াশুনা করার সময় , বাদাম বা এই ধরনের খাবার গুলি কম পরিমাণ খেলেও আপনাকে দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে।
পাতাযুক্ত সবুজ শাক: ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, গাঢ় সবুজ শাক যেমন কালে এবং পালং শাক পুষ্টির একটি দুর্দান্ত উত্স। এই পুষ্টিগুলি সর্বোত্তম সম্ভাব্য মস্তিষ্কের কার্যকারিতা সংরক্ষণের জন্য অপরিহার্য। পালং শাকের সঙ্গে সঙ্গে বাজারের বাকি যেকোনো শাক সমান ভাবে ভীষণ জরুরি।
ডিম: কোলিন সমৃদ্ধ, অ্যাসিটাইলকোলিনের একটি বিল্ডিং ব্লক, মেজাজ এবং স্মৃতির সাথে যুক্ত একটি নিউরোট্রান্সমিটার, ডিম একটি পুষ্টির পাওয়ার হাউস। ডিম একটি উচ্চ-প্রোটিন, উচ্চ-পুষ্টিযুক্ত খাবার যা আপনি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারেন।
ডার্ক চকলেট: ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যাফিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ডার্ক চকলেটে উচ্চ কোকো কন্টেন্ট পাওয়া যায়, যা চকোলেট প্রেমীদের জন্য সুখবর। এটি প্রমাণিত হয়েছে যে এই পদার্থগুলি সতর্কতা বাড়ায় এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। পরিমিত হওয়া অপরিহার্য, যদিও অত্যধিক চিনি এবং ক্যাফেইন নেতিবাচক পরিণতি হতে পারে।
প্রচুর জল পান করা দরকার
মস্তিষ্কের সর্বোত্তম কার্যকারিতার জন্য, স্বাস্থ্যকর খাওয়ার পছন্দ করা ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ যেমন প্রচুর জল পান করা। ডিহাইড্রেশনের ফলে ক্লান্তি, মনোযোগ দিতে সমস্যা এবং জ্ঞানীয় কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে। সারা দিন হাইড্রেটেড থাকার জন্য এটিকে একটি বিন্দু তৈরি করুন এবং আপনার খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে জলের খাবার যেমন ফল এবং শাকসবজি অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে চিন্তা করুন।
দীর্ঘ সময় পড়াশুনার সময় , এটি চিনিযুক্ত খাবার এবং ক্যাফিনযুক্ত পানীয় গ্রহণের জন্য আপনার মন আপনাকে টানতে পারে। স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেটের ভারসাম্য যুক্ত খাবার , যা পরিমাণে কম নিতে হবে এমন উচ্চ-পুষ্টিযুক্ত স্ন্যাকস বেছে নিতে পারেন। বেরির ফলের সঙ্গে দই, বা কলা এবং বাদাম মাখন এবং বা কিছুটা পনির নিতে পারেন।
কখন খাবেন:
খাবারের সময় গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি খাদ্যতালিকা নির্বাচনের উপর আপনার পুষ্টি ও অনেকটা সঠিক থাকবে। বারে বাড়ে কম কম পরিমাণ সুষম খাবার খাওয়ার চিন্তা করুন। এতে আপনার অবসাদ ও আসবে না এবং দীর্ঘ সময় পড়াশুনা ও করতে পারবেন। এই পদ্ধতিটি শক্তি হ্রাস হবে না। এবং পুষ্টির একটি অবিচ্ছিন্ন প্রবাহ বজায় রাখতে সহায়তা করে।
উপসংহার –
একাডেমিকভাবে সফল হওয়ার তাড়ায় পুষ্টি কীভাবে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে তা উপেক্ষা করা সহজ। কিন্তু আপনার ফোকাস করার, তথ্য মনে রাখার এবং পরীক্ষায় ভালো করার ক্ষমতা আপনার খাওয়ার দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হতে পারে। আপনি এটির জন্য ভাল খাবারগুলি বেছে নিয়ে, সেগুলিকে আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করে এবং প্রচুর পরিমাণে জল পান করে আপনার মস্তিষ্ককে সর্বাধিক কার্যকারিতার জন্য জ্বালানী দিতে পারেন। মনে রাখবেন যে একটি মস্তিষ্ক যা সঠিকভাবে খাওয়ানো হয় সেটি হল দক্ষ এবং মনোযোগী, পরীক্ষার দাবিগুলি নিশ্চিত করার জন্য প্রস্তুত।
বন্ধুরা তোমারা আমাদের Whatsapp গ্রুপে অবশ্যই যুক্ত হয়ে যাবে , Whatsapp গ্রুপে যুক্ত হওয়ার জন্য ডান দিকের "Join WhatsApp Group" ক্লিক করতে হবে। এই গ্রুপে আমরা নিয়মিত প্রশ্ন উত্তর দিতে থাকব।